কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে গরুর ঘানি। কাঠের ঘানি এবং সেই গরু দিয়ে ঘুরিয়ে সরিষা মাড়াই করে তেল বের করা এখন অনেকটাই রূপকথার গল্পের মতো। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে অনেক আগেই শুরু হয়েছে মেশিন দিয়ে মাড়াই করার পদ্ধতি। সেই কাজকে আরো সহজ করতে বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায় ভ্রাম্যমাণ ঘানি।
তেমনি ভাবে মেহেরপুরে সাড়া ফেলেছে তরুণ উদ্যোক্তা রবিউলের ভ্রাম্যমাণ ঘানি। রবিউল ইসলাম চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা থানার বাসিন্দা হলেও দির্ঘদিন ধরে তিনি ভ্রাম্যমাণ এই ঘানি চালিয়ে বেড়াচ্ছেন মেহেরপুরের বিভিন্ন জায়গায়।
গরু কিংবা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা না, সরাসরি পুরো একটি মিনি ট্রাকের উপর ঘানির মেশিন বসিয়ে সরিষার তেল উৎপাদন করছেন রবিউল। কারখানার সরঞ্জাম বলতে ড্রাম, মগ, গামলা, খালি প্লাস্টিক বোতল, খৈল, সরিষা রাখার বস্তা এবং ৩-৪ জন কর্মী। তাদের কেউ সরিষা ঢেলে তেল তৈরি করছেন। কেউ প্লাস্টিক বোতলে তেল ভরছেন আর কেউ বা নিচ্ছেন ক্রেতার হাতে থেকে টাকা। এমনই দৃশ্যের দেখা মেলে মেহেরপুর শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায়।
রবিউলের ভ্রাম্যমাণ ঘানি নজর কাড়ছে জেলার বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের। তেল মাড়াইয়ের দৃশ্য দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন অনেকেই। চোখে দেখে খাটি সরিষার তেল কিনতে দুরদুরান্ত থেকে আসছে অনেকেই। রবিউলের এই ব্যাতিক্রমি উদ্যোগ সাড়া ফেলেছে পুরো জেলায়।
ক্রেতা বাবু বলেন, কালের বিবর্তনে গরুর ঘানি হারিয়ে গেছে। ভেজালমুক্ত তেল পাওয়া এখন দুষ্কর হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে চোখের সামনে মাড়াই করে তেল তৈরী করা দেখে অনেক ভালো লাগছে।
শামীম বলেন, আমরা দোকান থেকে সরিষা তেল কিনি কিন্তু নিজে চোখে তো কোনদিন দেখিনি সেটি খাঁটি কি না। আমরা এটা নিজে চোখে সরিষা মাড়াই করে তেল তৈরী দেখছি বা দেখে নিতে পারছি এটা আমাদের কাছে খুব ভালো লাগছে। সরিষা মাড়াই করে তেল তৈরি হচ্ছে-নিজ চোখে দেখে সেই তেল কিনলেন।
জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান বলেন, সয়াবিন বা সানফ্লাওয়ার তেলের ব্যবহার বেশি হলেও সরিষার তেলের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। রান্না, ভর্তা, চাটনি তৈরি থেকে শুরু করে শিশুদের শরীরে পর্যন্ত সরিষার তেল ব্যবহার করা হয়। ভেজালের ভিড়ে খাঁটি সরিষার তেল চোখের সামনেই তৈরি করে দেওয়ার প্রক্রিয়াটা ইতিমধ্যে বেশ ভালো লেগেছে।
বরিউল বলেন, বছর পাঁচেক আগে ঢাকার সাভারে প্রথম দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ছোট একটি স্যালো ইঞ্জিন চালিত গাড়িতে ঘানির কাজ শুরু করে রবিউল। বর্তমানে তার পাঁচটি ভ্রাম্যমাণ ঘানি রয়েছে। যা চলে মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন স্পটে। প্রতিদিন ঘানি প্রতি প্রায় ৪০ থেকে ৫০ লিটার তেল উৎপাদন ও বিক্রি করে রবিউল। প্রতি লিটার সরিষার তেল বিক্রি করছেন ২৮০ টাকায়। তিনি আরও বলেন, ভেজালের ভিড়ে মানুষকে ভালো কিছু খাওয়ানোর জন্য আমার ছুটে চলা। এখানে চাইলে নিজের সরিষাও মাড়াই করে নিতে পারবে। আমার প্রোডাক্টটা শতভাগ খাঁটি ও হালাল। যেখানে কোন ধরণের ভেজালের মিশ্রণ নেই।